জ্যোতির্বিদ্যায় নারী: মারিয়া মিচেল ও বদলে যাওয়া দৃশ্যপট
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার জ্যোতির্বিজ্ঞান
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে জ্যোতির্বিদ্যাটি কেবল পুরুষ-প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হতো না। অনেক শিক্ষিতা কিশোরীকে তারা ও গ্রহগুলো পর্যবেক্ষণ করতে উৎসাহ দেওয়া হতো, যাকে “আকাশ ঝাঁকানো” বলা হতো। মারিয়া মিচেল, প্রথম পেশাদার নারী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একজন, এই পরিবেশেই গড়ে উঠেছিলেন। তাঁর পিতা, একজন শিক্ষক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী, অল্প বয়স থেকেই তাঁকে জ্যোতির্বিদ্যার দক্ষতা শেখান।
মারিয়া মিচেলের অর্জন
জ্যোতির্বিজ্ঞানে মারিয়া মিচেলের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ১৮৪৭ সালে তিনি একটি ধূমকেতু আবিষ্কার করেন, যা “মিস মিচেলের ধূমকেতু” নামে পরিচিত হয় এবং তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। তিনিই ছিলেন প্রথম নারী যিনি আমেরিকান একাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এবং আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স-এ নির্বাচিত হন।
মিচেলের কাজ কেবল নিজের গবেষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি আগ্রহী নারী বিজ্ঞানীদের জন্য আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন এবং তাদের এই ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সওয়াল করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, নারীদের নাজুক স্পর্শ ও তীক্ষ্ম দৃষ্টি জ্যোতির্বিদ্যার নিখুঁত কাজের জন্য একেবারে উপযুক্ত।
ভাসার কলেজ ও পেশাদার বিজ্ঞানের উত্থান
১৮৬৫ সালে মারিয়া মিচেল নবপ্রতিষ্ঠিত ভাসার কলেজের প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞান অধ্যাপিকা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রেক্ষাগৃহের পরিচালকা হন। বিষয়টির প্রতি তাঁর উৎসাহে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর শিক্ষার্থীরাও জ্যোতির্বিজ্ঞানে নিজেদের অবদান রাখে।
তবে বিজ্ঞান যতই পেশাদারীকরণের দিকে এগোতে থাকে, নারী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সুযোগ কমতে থাকে। ১৮৭০-এর দশকে জ্যোতির্বিদ্যায় বেতনভিত্তিক পদ সাধারণ হলে নারীরা প্রবেশের বাধার সম্মুখীন হন।
মিচেলের আন্দোলন ও উত্তরাধিকার
বাধা সত্ত্বেও মারিয়া মিচেল বিজ্ঞানে নারীদের পক্ষে সোচ্চার সমর্থক থেকেছিলেন। তিনি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব উইমেন সহপ্রতিষ্ঠা করেন এবং দুই বছর এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নারীদের জ্যোতির্বিদ্যায় অন্তর্ভুক্তির পক্ষে তিনি নিজের বক্তব্য তুলে ধরতেন, তাদের অনন্য দক্ষতা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে।
মিচেলের উত্তরাধিকার জটিল। জ্যোতির্বিদ্যায় নারীদের জন্য তিনি যেমন বড় সাফল্য এনেছিলেন, তেমনি তাঁর গল্প এই ক্ষেত্রে নারীদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ ও পিছু হটাও প্রতিফলিত করে। আজও জ্যোতির্বিদ্যায় নারীদের প্রতিনিধিত্ব কম—যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ২৬ শতাংশ জ্যোতির্বিদ্যা পিএইচডি ও ২৫ শতাংশ জ্যোতির্বিদ্যা অধ্যাপক নারী।
জ্যোতির্বিদ্যায় লিঙ্গের ক্রমবিকাশ
মারিয়া মিচেল ও অন্যান্য নারী জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ইতিহাস এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে যে বিজ্ঞান সর্বদা পুরুষ-প্রধান ক্ষেত্র ছিল। এটি জ্যোতির্বিদ্যাসহ স্টেম-এ নারীদের জন্য উপলব্ধ সুযোগগুলোর ওপর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণের প্রভাব তুলে ধরে।
মিচেলের গল্প স্মরণ করিয়ে দেয় যে বিজ্ঞানে নারীর অগ্রগতি রৈখিক নয়। অগ্রগতির সময়কাল এসেছে, পিছু হটাও এসেছে। এই জটিলতা বোঝা জ্যোতির্বিদ্যা ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে নারীদের চলমান চ্যালেঞ্জ বুঝতে অপরিহার্য।
